হামদ শব্দের তাফসীর
হামদ অর্থ প্রশংসা
১. আরবী ভাষায় হামদ অর্থ নির্মল ও সম্ভ্রমপূর্ণ প্রশংসা।
গুণ ও সিফাত সাধারণতঃ
দুই প্রকার হয়ে থাকে। তা ভালও হয় আবার মন্দও হয়।
কিন্তু হামদ শব্দটি কেবলমাত্র ভাল গুণ প্রকাশ করে।
অর্থাৎ বিশ্ব জাহানের যা কিছু এবং যতকিছু ভাল, সৌন্দর্য-মাধুর্য, পূর্ণতা মাহাত্ম দান ও অনুগ্রহ রয়েছে তা যেখানেই এবং যে কোন রূপে ও যে কোন অবস্থায়ই থাকুক না কেন, তা সবই একমাত্র আল্লাহ তা’আলারই জন্য নির্দিষ্ট,
একমাত্র তিনিই-তার মহান সত্তাই সে সব পাওয়ার অধিকারী।
তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্যই এর যোগ্য হতে পারে না।
কেননা সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা তিনিই এবং তার সব সৃষ্টিই অতীব সুন্দর।
এর অধিক সুন্দর আর কিছুই হতে পারে না মানুষ কল্পনাও করতে পারে না।
তার সৃষ্টি, লালন-পালন-সংরক্ষণ-প্রবৃদ্ধি সাধনের সৌন্দর্য তুলনাহীন।
জেগে উঠা প্রশংসা
তাই এর দরুন মানব মনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জেগে উঠা প্রশংসা ও ইচ্ছামূলক প্রশংসাকে হামদ বলা হয়।
এখানে এটা বিশেষভাবে জানা আবশ্যক যে, “আল-হামদু” কথাটি ‘আশ-শুকর’ থেকে অনেক ব্যাপক, যা আধিক্য ও পরিপূর্ণতা বুঝায়।
কেউ যদি কোন নিয়ামত পায়, তা হলে সেই নিয়ামতের জন্য শুকরিয়া প্রকাশ করা হয়।
সে ব্যক্তি যদি কোন নিয়ামত না পায় (অথবা তার পরিবর্তে অন্য কোন লোক নিয়ামতটি পায়) স্বভাবতঃই তার বেলায় এজন্য শুকরিয়া নয়।
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিয়ামত পায়, সে-ই শুকরিয়া আদায় করে।
যে ব্যক্তি নিয়ামত পায় না, সে শুকরিয়া আদায় করে না।
আশ-শুকর লিল্লাহ
এ হিসেবে ‘আশ-শুকর লিল্লাহ’ বলার অর্থ হতো এই যে, আমি আল্লাহর যে নিয়ামত পেয়েছি,
সেজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।
অপরদিকে ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ অনেক ব্যাপক।
এর সম্পর্ক শুধু নিয়ামত প্রাপ্তির সাথে নয়।
আল্লাহর যত নেয়ামত আছে, তা পাওয়া যাক, বা না পাওয়া যাক; সে নিয়ামত কোন ব্যক্তি নিজে পেলো, বা অন্যরা পেলো, সবকিছুর জন্যই যে প্রশংসা আল্লাহর প্রাপ্য সেটিই হচ্ছে হামদ।
আল-হামদুলিল্লাহ
এ প্রেক্ষিতে ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলে বান্দা যেন ঘোষণা করে, হে আল্লাহ!
সব নিয়ামতের উৎস আপনি, আমি তা পাই বা না পাই, সকল সৃষ্টিজগতই তা পাচ্ছে;
আর সেজন্য সকল প্রশংসা একান্তভাবে আপনার আর কারও নয়।
কেউ আপনার প্রশংসা করলে আপনি প্রশংসিত হবেন আর কেউ প্রশংসা না করলে প্রশংসিত হবেন না, ব্যাপারটি এমন নয়।
আপনি স্বপ্রশংসিত।
প্রশংসা আপনার স্থায়ী গুণ।
প্রশংসা আপনি ভালবাসেন।
আপনার প্রশংসা কোন দানের বিনিময়ে হতে হবে এমন কোন বাধ্য-বাধকতা নেই। [ইবন কাসীর]