দু’ সালাত জমা করে আদায় করার জন্য কী সফরের অবস্থায় থাকা শর্ত?
ইমাম মালেক, কাযী আবু ইয়া‘লা আল-হাম্বলী, ইবনুল কাইয়্যেম এবং ইবনে তাইমিয়্যার কথা থেকে বুঝা যায় যে তাদের মত হচ্ছে, দু’ সালাতকে জমা করা কেবল সফররত অবস্থাতেই জায়েয, সফরে কোথাও অবস্থান করলে জায়েয নয়। [১] কারণ আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বর্ণিত হাদীসে তা-ই এসেছে, তিনি বলেন,
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিব ও ইশার সালাতকে একসময়ে পড়তেন, যখন সফর চলমান হতো”। [2]
অন্যদিকে শাফে‘য়ী মাযহাবের আলেমগণ এবং হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণ, আর তার সাথে ইমাম মালেক এর একটি মতও রয়েছে, তাদের মতে, যে সফরে সালাত কসর করে পড়া হয় সে সফরেই জমা করা জায়েয। সফর চলমান হোক কিংবা কোথাও অবস্থান করে হোক। তবে সফরের বিধান থেকে বের হয়নি এমন হতে হবে। এর বাইরে যতক্ষণ তাকে মুসাফির বলা হবে ততক্ষণই সে জমা করতে পারবে। [3]
ইবন কুদামা বলেন, যদি দু সালাতকে প্রথম সালাতের সময়ে আদায় করতে চায় তবে তাও জায়েয, চাই কোথাও অবতরণকারী অবস্থায় হোক বা সফর চলাকালীন অবস্থায় হোক অথবা এমন কোনো এলাকায় অবস্থানকারী হয় যেখানে অবস্থানের কারণে সালাতকে কসর করে পড়তে বাধা হয় না। এর এটাই আতা ইবন আবি রাবাহ, অধিকাংশ আহলে মদীনা, শাফে‘ঈ, ইসহাক ও ইবনুল মুনযিরের মত। [4]
বস্তুত এটাই প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত, এর সপক্ষে প্রমাণ হচ্ছে:
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাবুকের যুদ্ধে বের হলাম, রাসূল সালাতে জমা করতেন, সুতরাং তিনি যোহর ও আসরকে জমা করতেন, আবার মাগরিব ও ইশাকেও জমা করতেন। একদিন তিনি সালাত আদায়ে দেরী করলেন, সুতরাং তিনি যোহর ও আসরকে জমা করলেন, তারপর তিনি তার তাঁবুতে প্রবেশ করলেন, তারপর বেশ কিছু পরে বের হলেন অতঃপর মাগরিব ও ইশাকে জমা করে আদায় করলেন। [5]
তারপর আবার নিজের তাঁবুতে ফিরে গিয়েছিলেন। আর এ হাদীসটি গ্রহণ করা সুনির্দিষ্ট। কারণ হাদীসটি সাব্যস্ত হয়েছে এবং বিধান প্রদানে তা সুস্পষ্ট আর তার বিপরীতে কোনো কিছু নেই। তাছাড়া জমা করা হচ্ছে সফরের রুখসত বা ছাড়সমূহের একটি; সুতরাং তা কেবল ভ্রমণরত অবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট হবে না, যেমনিভাবে কসর ও মাসেহ করার বিধানকে শুধু ভ্রমণরত অবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট করা যায় না। তবে উত্তম হচ্ছে দেরী করার জমা করা, (দ্বিতীয়টির ওয়াক্তে প্রথমটি ও দ্বিতীয়টি পড়া) কারণ এর মাধ্যমে জমা করার ব্যাপারে মতভেদকারীদের মতভেদ থেকে বের হওয়া যায় এবং সকল হাদীসের উপরই আমল করা যায়।” [6]
সুতরাং বুঝা গেল যে,
তথ্যসূত্র
- 1. আল-মুদাওয়ানাহ ১/২০৫, আল-মুবদি‘ ২/১২৫, আল-ওয়াবিলুস সাইয়্যিব পৃ. ১৪, মাজমূ ফাতাওয়া ২০/৩৬০, ২২/২৯০
- 2. বুখারী, ১০৫৫; মুসলিম, ৭০৩
- 3. মুগনিল মুহতাজ ১/৫২৯; কাশশাফুল কিনা‘ ২/৫; আল-বায়ান ওয়াত তাহসীল ১৮/১১০
- 4. আল-মুগনী ২/২০১
- 5. মুসলিম, ৭০৬
- 6. আল-মুগনী, ২/২০২
- মূলঃ ইসলামহাউজ.কম