দু’ সালাত জমা করে আদায় করার জন্য কী সফরের অবস্থায় থাকা শর্ত?

দু’ সালাত জমা করে আদায় করার জন্য কী সফরের অবস্থায় থাকা শর্ত?

সফর অবস্থায় জমা করার কথা যারাই বলেছেন, তারা সবাই এ ব্যাপারে একমত যে, জমা করা তখন জায়েয, যখন মুসাফির সালাতের সময়ে সফরে ভ্রমণরত ও রাস্তা অতিক্রমরত অবস্থায় থাকবেন।
কিন্তু মুসাফির কোনো শহরে অবস্থানরত অবস্থায় যদি সালাত কসর আদায় করতে থাকেন তখনও কি তিনি দু’ সালাত জমা করে আদায় করতে পারবেন? এ ব্যাপারে আলেমগণের মধ্যে দু’টি মত রয়েছে:

ইমাম মালেক, কাযী আবু ইয়া‘লা আল-হাম্বলী, ইবনুল কাইয়্যেম এবং ইবনে তাইমিয়্যার কথা থেকে বুঝা যায় যে তাদের মত হচ্ছে, দু’ সালাতকে জমা করা কেবল সফররত অবস্থাতেই জায়েয, সফরে কোথাও অবস্থান করলে জায়েয নয়। [১] কারণ আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বর্ণিত হাদীসে তা-ই এসেছে, তিনি বলেন,

“كان النبي صلى الله عليه وسلم يجمع بين المغرب والعشاء إذا جدّ به السير”

“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিব ও ইশার সালাতকে একসময়ে পড়তেন, যখন সফর চলমান হতো”। [2]

অন্যদিকে শাফে‘য়ী মাযহাবের আলেমগণ এবং হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণ, আর তার সাথে ইমাম মালেক এর একটি মতও রয়েছে, তাদের মতে, যে সফরে সালাত কসর করে পড়া হয় সে সফরেই জমা করা জায়েয। সফর চলমান হোক কিংবা কোথাও অবস্থান করে হোক। তবে সফরের বিধান থেকে বের হয়নি এমন হতে হবে। এর বাইরে যতক্ষণ তাকে মুসাফির বলা হবে ততক্ষণই সে জমা করতে পারবে। [3]

ইবন কুদামা বলেন, যদি দু সালাতকে প্রথম সালাতের সময়ে আদায় করতে চায় তবে তাও জায়েয, চাই কোথাও অবতরণকারী অবস্থায় হোক বা সফর চলাকালীন অবস্থায় হোক অথবা এমন কোনো এলাকায় অবস্থানকারী হয় যেখানে অবস্থানের কারণে সালাতকে কসর করে পড়তে বাধা হয় না। এর এটাই আতা ইবন আবি রাবাহ, অধিকাংশ আহলে মদীনা, শাফে‘ঈ, ইসহাক ও ইবনুল মুনযিরের মত। [4]

বস্তুত এটাই প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত, এর সপক্ষে প্রমাণ হচ্ছে:

মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীস, তিনি বলেন, “خرجنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم عام غزوة تبوك، فكان يجمع الصلاة، فصلى الظهر والعصر جميعًا، والمغرب والعشاء جميعًا، حتى إذا كان يومًا أخّر الصلاة، ثم خرج فصلى الظهر والعصر جميعًا، ثم دخل، ثم خرج بعد ذلك، فصلى المغرب والعشاء جميعًا”

“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাবুকের যুদ্ধে বের হলাম, রাসূল সালাতে জমা করতেন, সুতরাং তিনি যোহর ও আসরকে জমা করতেন, আবার মাগরিব ও ইশাকেও জমা করতেন। একদিন তিনি সালাত আদায়ে দেরী করলেন, সুতরাং তিনি যোহর ও আসরকে জমা করলেন, তারপর তিনি তার তাঁবুতে প্রবেশ করলেন, তারপর বেশ কিছু পরে বের হলেন অতঃপর মাগরিব ও ইশাকে জমা করে আদায় করলেন। [5]

ইবন কুদামা বলেন, এ হাদীসটি তাদের কথার উত্তরে স্পষ্ট দলীল ও শক্তিশালী প্রমাণ, যারা বলে থাকেন যে দু’ সালাত কেবল তখনই জমা করা যাবে যখন কেউ ভ্রমণরত অবস্থায় থাকবে; কারণ এটা প্রমাণ করে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভ্রমণরত অবস্থা ছাড়াও যখন তিনি কোথাও অবতরণ করেছিলেন তখনও জমা করেছেন, তিনি তখন তাঁর তাঁবুতে অবস্থান নিয়েছিলেন, সেখান থেকে তিনি বের হয়েছিলেন এবং দু’সালাতকে জমা করে আদায় করেছেন।
তারপর আবার নিজের তাঁবুতে ফিরে গিয়েছিলেন। আর এ হাদীসটি গ্রহণ করা সুনির্দিষ্ট। কারণ হাদীসটি সাব্যস্ত হয়েছে এবং বিধান প্রদানে তা সুস্পষ্ট আর তার বিপরীতে কোনো কিছু নেই। তাছাড়া জমা করা হচ্ছে সফরের রুখসত বা ছাড়সমূহের একটি; সুতরাং তা কেবল ভ্রমণরত অবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট হবে না, যেমনিভাবে কসর ও মাসেহ করার বিধানকে শুধু ভ্রমণরত অবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট করা যায় না। তবে উত্তম হচ্ছে দেরী করার জমা করা, (দ্বিতীয়টির ওয়াক্তে প্রথমটি ও দ্বিতীয়টি পড়া) কারণ এর মাধ্যমে জমা করার ব্যাপারে মতভেদকারীদের মতভেদ থেকে বের হওয়া যায় এবং সকল হাদীসের উপরই আমল করা যায়।” [6]
তারপরও মুসাফিরের উচিত নয় যে সে কোনো নগর বা শহরে অবতরণ করা অবস্থায় সালাতকে জমা করে আদায় করাকে তার অভ্যাসে পরিণত করে নিবে। বরং জমা তো তখনই করবে যখন তার প্রয়োজন পড়বে এবং তার উপর প্রত্যেক সালাতকে তার নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে।

সুতরাং বুঝা গেল যে,

যোহর ও আসর এবং মাগরিব ও ইশার সালাতকে জমা করে আদায় করা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসাফিরের জন্য রুখসত বা ছাড় এবং সহজীকরণ আর তা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ।
জমা করা হচ্ছে রুখসত বা ছাড়; যা মুসাফির তার প্রয়োজনে কাজে লাগাবে তবে তা এমন সাধারণ নিয়ম নয় যা সর্বদা করতে হবে।
আলেমগণের প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত অনুযায়ী জমা করার সময় প্রথম সালাত আদায় করার সময়েই জমা করার নিয়্যত থাকা শর্ত নয়।

তথ্যসূত্র

Leave a Reply