কি করলে শির্ক হয় এবং শির্ক করলে কি হয়?

কি করলে শির্ক হয় এবং শির্ক করলে কি হয়?

ইসলামে শির্ক অর্থাৎ আল্লাহর সাথে কাউকে বা কোনো কিছু অংশীদার করা অত্যন্ত গুরুতর পাপ। এমন কিছু কাজ বা বিশ্বাস রয়েছে যা শির্ক হিসেবে বিবেচিত হয়। নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় দেওয়া হলো, যা করলে শির্ক হয়:

১. আল্লাহ ছাড়া অন্যকে উপাস্য হিসেবে মানা

  • আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে যেমন দেবতা, দেবী বা পীরকে ইবাদতের জন্য উপাস্য হিসেবে মানলে শির্ক হয়। উদাহরণস্বরূপ, কারো উদ্দেশ্যে নামাজ পড়া, প্রার্থনা করা বা সিজদা করা শির্কের মধ্যে পড়ে।

২. আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সাহায্যের জন্য ডাকা

  • সাহায্যের জন্য বা কষ্ট লাঘবের জন্য যদি আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কারো কাছে প্রার্থনা করা হয়, যেমন কবরের ওলি-আউলিয়াদের বা কোনো ব্যক্তিত্বকে ডাকা হয়, তবে এটি শির্ক বলে বিবেচিত হয়।

৩. ভাগ্য নির্ধারণে অন্য কাউকে বিশ্বাস করা

  • কেউ যদি মনে করে যে, তার ভাগ্য বা জীবনের ঘটনাবলী নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা অন্য কারো কাছে আছে, যেমন জ্যোতিষ, গ্রহ-নক্ষত্র বা অন্য কোনো মানুষ, তবে তা শির্ক। ভাগ্য আল্লাহর হাতে নির্ধারিত, এবং অন্য কাউকে তা নির্ধারণকারী হিসেবে মানা আল্লাহর সঙ্গে শির্ক করা।

৪. রিয়া (লোক দেখানো কাজ)

  • ইবাদত বা ভালো কাজ যদি মানুষের প্রশংসা পাওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়, তাহলে তা ছোট শির্কের অন্তর্ভুক্ত হয়। এটি এমন একটি কাজ, যা ইবাদতে খাঁটি মনোভাবকে নষ্ট করে।

৫. তাবিজ-কবচ, ঝাড়ফুঁক বা জাদুটোনা করা

  • যদি কেউ মনে করে, তাবিজ, ঝাড়ফুঁক, জাদু বা তন্ত্রমন্ত্র দ্বারা তাকে ক্ষতি থেকে বাঁচানো বা উপকার করা সম্ভব, তবে তা শির্কের পর্যায়ে পড়ে। কারণ এটি আল্লাহর বদলে অন্য কিছুর ওপর নির্ভরশীলতার প্রতীক।

৬. আল্লাহর গুণাবলী অন্য কাউকে দেওয়া

  • আল্লাহর বিশেষ গুণাবলী যেমন সৃষ্টি করা, রিজিক দেওয়া, ক্ষমা করা, ইত্যাদি অন্য কাউকে দেওয়া বা মানা শির্ক। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ এ ক্ষমতার অধিকারী নয়।

৭. কসম বা শপথে অন্য কিছুকে স্থান দেওয়া

  • আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করা শির্কের অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহর নাম বাদ দিয়ে যদি কারো নামে বা অন্য কিছুর নামে শপথ করা হয়, তবে তা শির্কের মধ্যে পড়ে।

৮. জীবনের কোনো ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধানের বাইরে অন্য কারো নির্দেশ মানা

  • জীবনের যে কোনো বিষয়ে যদি আল্লাহর দেওয়া বিধান এবং প্রিয় নবী (সা.) এর সুন্নাহ বাদ দিয়ে অন্য কারো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তবে তা শির্কের কারণ হতে পারে। যেমন, বিচার ব্যবস্থায় আল্লাহর বিধানের বাইরে অন্য কোনো আইনের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখা।

শির্ক আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত অপরাধ, যা থেকে মুসলমানদের সর্বদা দূরে থাকতে উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ একমাত্র ইবাদতের যোগ্য, এবং অন্য কাউকে বা কোনো কিছুকে তার সমতুল্য করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

যেসব কাজ করলে শির্ক হয় এর তালিকা অনেক বড় ।

নিম্নে এর কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:

  • পূজা করা,
  • কোন পীর-
  • বুজুর্গ ও কবরে-মাযারে সিজদা করা,
  • আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ গায়েব জানে বলে বিশ্বাস করা,
  • নবী (স) বা কোন পীর মুর্শেদ গায়েবের খবর রাখেন বলে বিশ্বাস করা,
  • গণক ও জাদুকরের কথায় বিশ্বাস করা,
  • মাযারে গিয়ে কোন কিছু চাওয়া,
  • কবরে দাঁড়িয়ে মৃত ব্যক্তির কাছে বিপদ থেকে মুক্তি চাওয়া,
  • মাযারে মান্নত করা,
  • আল্লাহ তাআলাকে যে পরিমাণ ভালোবাসা দরকার সে পরিমাণে কোন পীরকে মহব্বত করা,
  • তাবীজ-কবজ ব্যবহার করা ইত্যাদি সবই বড় শির্ক ।

কথায়, কাজে ও বিশ্বাসে মানুষ এমনভাবে শির্কের মধ্যে সয়লাব হয়ে আছে এবং তাদের সংখ্যা। এত বেশি বেড়ে গেছে যে,

কুরআন কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেন,

“ঈমানদার সম্প্রদায়ের মধ্যে শির্ককারীদের সংখ্যা অর্ধেকের বেশি।(সূরা ১২: ইউসুফ ১০৬)Tweet

অর্থাৎ ঈমানের দাবি করলেও অধিকাংশ মানুষই মুশরিক। আর যে কেউ শির্ক করলে তার দেহ-মন আদ্যোপান্ত নাপাক হয়ে যায়, যা ওযু-গোসল দিয়ে পাক হয় না । আল্লাহ তাআলা বলেন,

সূরা ৯; তাওবা ২৮

“যারা শির্ক করে তারা নাপাক।”

আর এ শির্কের মাধ্যমে বান্দার যে করুণ পরিণতি হয় তা হলো:

  • ১. ঈমান ভঙ্গ হয়ে যায়,
  • ২. তার পূর্বের সকল নেক আমল বাতিল হয়ে যায়। (সূরা ৩৯; যুমার ৬৫)
  • ৩. তার ভালো কাজ ও ইবাদতগুলোকে ধুলায় ধুসরিত করে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হয় । (সূরা ২৫; ফুরকান ২৩; সূরা ২২; হাজ্জ ৩১)
  • ৪. শির্ক করার পর ঐ লোক যেসব ইবাদত করে সেগুলোও কবুল হয় না। (সূরা ১৮; কাহফ ১০৫)। কারণ সে তখন ঈমান থেকে খারিজ হয়ে যায় । আর ইবাদত কবুলের প্রধান শর্ত হলো ঈমান থাকা। (সূরা ১৮; কাহফ ১০৭)
  • ৫. তার বিবেক বিভ্রান্ত হয়ে যায় (সূরা ৪; নিসা ১১৬)। ফলে সে হককে বাতিল হিসেবে দেখে এবং বাতিলকে সে হক বলে তা আমল করে। এভাবেই সে ধ্বংস হয়ে যায় ।
  • ৬. জান্নাত চিরতরে তার জন্য হারাম হয়ে যায় (সূরা ৫; মায়িদা ৭২)। যদিও সে মুসলিম পিতার সন্তান এবং নিজেকে সে মুসলিম বলে দাবি করে।
  • ৭. জাহান্নাম হবে তার জন্য চিরস্থায়ী ঠিকানা (সূরা ৯৮; বাইয়্যিনা ৬) (নাউযুবিল্লাহ)

কি করলে শির্ক হয় এবং শির্ক করলে কি হয়?

তথ্যসূত্র

  • বইঃ প্রশ্নোত্তরে ফিকহুল ইবাদাত
    • প্রথম অধ্যায় –
      • তাহারাত বা পবিত্রতা
        • লেখকঃ অধ্যাপক মোঃ নূরুল ইসলাম
  • সোর্স লিংকঃ বাংলা হাদিস

Leave a Reply