ঈমান দুর্বলতার আলামত

ঈমান দুর্বলতার আলামত

১) পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া:

কিছু মানুষ একই পাপ বারবার করে। কেউ আবার বিভিন্ন প্রকার পাপ করে। পাপ করতে করতে করতে যখন তা অভ্যাসে পরিণত হয় তখন পাপকে আর পাপ বলে মনে হয় না! পাপের কদর্যতা অন্তর থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এক পর্যায়ে মানুষ প্রকাশ্যে পাপ করা শুরু করে বা গোপনে পাপ করার পর মানুষের কাছে তা প্রকাশ করে দেয়!

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

كُلُّ أُمَّتِى مُعَافًى إِلاَّ الْمُجَاهِرِينَ ، وَإِنَّ مِنَ الْمَجَاهرة أَنْ يَعْمَلَ الرَّجُلُ بِاللَّيْلِ عَمَلاً ، ثُمَّ يُصْبِحَ وَقَدْ سَتَرَهُ اللَّهُ ، فَيَقُولَ يَا فُلاَنُ عَمِلْتُ الْبَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا ، وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ وَيُصْبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللَّهِ عَنْهُ

অনুবাদঃ “আমার উম্মতের সকলকেই ক্ষমা করে দেয়া হবে। তবে ঐ সকল লোককে ক্ষমা করা হবে না যারা পাপ করার পর তা অন্যের নিকট প্রকাশ করে দেয়। অন্যের নিকট প্রকাশ করার একটি দিক হল, কোন ব্যক্তি রাতের আঁধারে কোন গুনাহ করল এবং মহান আল্লাহ তার পাপটা গোপন করে রাখলেন। কিন্তু ভোর হলে সে নিজেই অন্য মানুষের নিকট বলল, হে উমুক, জানো, রাতে আমি এই এই কাজ করেছি। সারা রাত আল্লাহ তার পাপটাকে ঢেকে রেখেছিলেন কিন্তু ভোর হলে নিজেই আল্লাহর ঢেকে রাখা বিষয়টি প্রকাশ করে দিল।” [1]

২) অন্তর কঠিন হয়ে যাওয়া:

ঈমান দুর্বলতার একটি আলামত হল অন্তর কঠিন হয়ে যাওয়া। মনটা পাথরের মত এতটাই শক্ত হয় যে, তাতে কোন কিছুই প্রভাব সৃষ্টি করে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

ثُمَّ قَسَتْ قُلُوبُكُم مِّن بَعْدِ ذَٰلِكَ فَهِيَ كَالْحِجَارَةِ أَوْ أَشَدُّ قَسْوَةً

অনুবাদঃ “অতঃপর এ ঘটনা (তথা বিস্ময়কর মুজিযা দেখার পরে) তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে। তা পাথরের মত অথবা তদপেক্ষাও কঠিন।” (2)

ব্যাখ্যাঃ কঠিন অন্তরের মানুষের মনে মৃত্যু সম্পর্কিত নসিহত প্রভাব ফেলে না। মৃত্যু কিংবা জানাযা দেখেও তার মনে দাগ কাটে না। এমনকি কাঁধে লাশ বহন করলে বা লাশকে কবরের গর্তে রাখতে দেখেও তার মনের মধ্যে ভাবান্তর ঘটে না। গোরস্থান দিয়ে হেঁটে গেলে তার কাছে মনে হয় যে, কতগুলো ইট-পাথরের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে!!

৩) মজবুতভাবে ইবাদত না করা:

ঈমান দুর্বল হয়ে গেলে মানুষ নামাজ,কুরআন তেলাওয়াত, দুয়া ইত্যাদিতে মানসিক অস্থিরতা অনুভব করে। দুয়া ও যিকিরগুলো পড়লেও সেগুলোর মর্মার্থ নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে না। মানসিক উদাসীনতা ও অবহেলার সাথে দুয়া করে। অথচ হাদীসে এসেছে:

ادْعُوا اللَّهَ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالْإِجَابَةِ ، وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَجِيبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لَاهٍ

অনুবাদঃ “তোমরা এই দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর নিকট দুয়া করো যে, তিনি তা কবুল করবেন। জেনে রেখো, আল্লাহ তাআলা উদাসীন ও হেয়ালী হৃদয়ের দুয়া কবুল করেন না।” (3)

৪) ইবাদতে অলসতা করা:

ইবাদতে অলসতা করা ঈমান দুর্বলতার অন্যতম আলামত। দুর্বল ঈমানের লোকেরা ইবাদত করলেও তা হয় অন্তঃসার শূন্য নড়াচড়া-যার মধ্যে প্রাণের স্পর্শ থাকে না। মূলত: এটি মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللَّـهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُوا إِلَى الصَّلَاةِ قَامُوا كُسَالَىٰ يُرَاءُونَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُونَ اللَّـهَ إِلَّا قَلِيلًا

অনুবাদঃ “অবশ্যই মুনাফেকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুত: তারা যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন দাঁড়ায়, একান্ত শিথিল ভাবে লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।” (4)

ব্যাখ্যাঃ ইবাদতে অলসতার কয়েকটি দিক হল, সুন্নতে রাতেবা (পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের আগে ও পরে যে সকল সুন্নত নিয়মিতভাবে পড়া হয়), তাহাজ্জুদ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ নফল সালাত যেমন, সালাতুত তাওবা, সালাতুল ইস্তিখারা, সালাতুয যুহা (চাশতের সালাত) ইত্যাদি আদায়ের ব্যাপারে অলসতা করা। এমনকি জানাযার সালাতেও অংশ গ্রহণ করতে অবহেলা প্রদর্শন করা। আগেভাগে মসজিদে না যাওয়া ইত্যাদি।

৫) অন্তরে সংকীর্ণতা অনুভব করা:

দুর্বল ঈমানের একটি দিক হল অন্তরে সংকীর্ণতা অনুভব করা এবং মন-মস্তিষ্ক ও আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হওয়া।

এ অবস্থায় একজন ব্যক্তি মানসিকভাবে এতটাই অস্থিরতা অনুভব করে যে, তার কাছে মনে হয়, বিরাট একটি বোঝা তার মাথার উপর চেপে আছে।

এ ধরণের মানুষ দ্রুত রেগে যায়। সামান্যতেই কষ্ট পায়। তার ধৈর্য, সহনশীলতা ও মানসিক উদারতা বিদায় নেয় এবং চারপাশের মানুষের আচরণে সে খুবই সংকীর্ণতা অনুভব করে। অথচ সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:

سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ” عَنِ الإِيمَانِ ، قَالَ : الصَّبْرُ وَالسَّمَاحَةُ

অনুবাদঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন: ঈমান হল: ধৈর্য ও উদারতা।” (5)

৬) কুরআনের আয়াত, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ, আযাব-গযব এবং কিয়ামতের বিবরণ শুনে প্রভাবিত না হওয়া:

এটি ঈমান দুর্বলতার একটি ভয়াবহ আলামত। দুর্বল ঈমানের অধিকারী ব্যক্তি কুরআনের তিলাওয়াত শুনতে বিরক্ত হয়,নিজে কুরআন পড়ে না, আর পড়তে বসলেও পড়া অব্যাহত রাখতে পারে না। কুরআন খুলেই আবার বন্ধ করে দেয়!

৭) আল্লাহর যিকির-আযকার, দুয়া ইত্যাদির ব্যাপারে অমনোযোগী থাকা:

আল্লাহ বলেনঃ “তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।” (6)

৮) আল্লাহ বিধান লঙ্ঘিত হতে দেখলেও মনে রাগ বা ক্ষোভ সৃষ্টি না হওয়া:

এটি ঈমানী দূর্বলতার অন্যতম প্রমাণ। কারণ মানুষের মনে যখন আত্মসম্মানের আগুন নিভে যায় তখন তার ভেতরের প্রতিবাদের শক্তি নি:শেষ হয়ে যায়। তখন সে ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ বোধ করে না আর মন্দ কাজের প্রতিবাদে জ্বলে উঠতে পারে না।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

أَسْوَدُ مُرْبَادًّا كَالْكُوزِ مُجَخِّيًا لاَ يَعْرِفُ مَعْرُوفًا وَلاَ يُنْكِرُ مُنْكَرًا إِلاَّ مَا أُشْرِبَ مِنْ هَوَاهُ

“(ফেতনা-ফ্যাসাদের যুগে কিছু মানুষের) সাদা অন্তরে কালোর মিশ্রণ ঘটবে। অন্তরগুলো হবে উল্টানো জগের মত। সে কেবল তার কু প্রবৃত্তির চাহিদা ছাড়া কোন ভাল জিনিস চিনবে না এবং মন্দ জিনিসকে প্রতিহত করবে না।” (সহীহ মুসলিম)

৯) নিজেকে লোক সমাজে প্রকাশের মনোবাসনা সৃষ্টি হওয়া:

  • ✪ ক) নেতৃত্ব ও পদ গ্রহণে উদগ্রীব থাকা।
  • ✪ খ) সভা-সমাবেশে প্রধান অতিথি হওয়ার বা সামনে থাকার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা:
  • গ) মানুষ তার সম্মানে উঠে দাঁড়াক এমন বাসনা থাকা:

১০) প্রচণ্ড অর্থলিপ্সা ও কৃপণতা করা:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

إِياكُمْ والشح، فإنما هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بالشح، أمَرَهُمْ بِالبُخْلِ فَبَخلُوا، وأمَرَهُمْ بالقَطيعَة فَقَطَعُوا، وَأمَرَهُمْ بالفُجُورِ فَفَجَرُ

অনুবাদঃ “তোমরা অতিঅর্থলিপ্সার ব্যাপারে সাবধান হও। কারণ,এটি তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ধ্বংসের একটি কারণ। এই কারণেই তারা কৃপণতা করেছিল, আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করেছিল এবং নানা পাপাচারে নিমজ্জিত হয়েছিল।” [7]

১১) এমন কথা বলা যা সে নিজে করে না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ – كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّـهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ -كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّـهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ

অনুবাদঃ “হে ঈমানদারগণ,তোমরা এমন কথা কেন বল যা তোমরা কর না? এটা আল্লাহর নিকট খুব রাগের বিষয় যে, তোমরা যা কর না তা বলে বেড়াও। তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষ জনক।” [8]

নি:সন্দেহে এটি মুনাফিকের কাজ। যার কথার সাথে কাজে মিল নেই সে যেমন মানুষের চোখে ঘৃণিত তেমনি আল্লাহর চোখেও ঘৃণিত।

১২) কোন মুসলিমের বিপদ দেখে আনন্দিত হওয়া:

কোন মুসলিম ক্ষতিগ্রস্ত হলে, কোন ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে, কোন বিপদে পড়লে তাতে আনন্দিত হওয়া নি:সন্দেহে ঈমানী দুর্বলতার লক্ষণ।

১৩) কল্যাণকর কাজকে তুচ্ছ মনে করা বা ছোট ছোট নেকীর কাজকে গুরুত্ব না দেয়া:

আবু জারী আল হুজাইমী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা পল্লী-গাঁয়ের মানুষ। আমি আমাদেরকে এমন কিছু শিক্ষা দিন যাতে আমাদের উপকার হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

“لا تَحْقِرَنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ شَيْئًا , وَلَوْ أَنْ تُفْرِغَ مِنْ دَلْوِكَ فِي إِنَاءِ الْمُسْتَسْقِي، وَلَوْ أَنْ تُكَلِّمَ أَخَاكَ وَوَجْهُكَ مُنْبَسِطٌ إِلَيْهِ”

“তোমরা কোন ভাল কাজকেই তুচ্ছ মনে কর না। যদিও তা পানি সংগ্রহকারীর পাত্রে তোমার বালতি থেকে কিছু পানি ঢেলে দেয়া হোক না কেন অথবা তোমার ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে কথা বলা হোক না কেন।” [9]

১৪) মুসলিমদের বিভিন্ন ঘটনাবলীতে গুরুত্ব না দেয়া:

দুর্বল ঈমানের মানুষেরা বিশ্বের দিকে দিকে মুসলিমদের উপর নেমে আসা জুলুম-নির্যাতন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা সংকটের ব্যাপারে দুআ করতে বা সামান্য আর্থিক সহযোগিতা এমনকি একটু সহানুভূতি প্রকাশ করা থেকেও দূরে থাকে! অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

“الْمُؤْمِنُ مِنْ أَهْلِ الإِيمَانِ، بِمَنْزِلَةِ الرَّأْسِ مِنَ الْجَسَدِ، يَأْلَمُ الْمُؤْمِنُ لأَهْلِ الإِيمَانِ، كَمَا يَأْلَمُ الْجَسَدُ لِمَا فِي الرَّأْسِ

“ঈমানদারদের জন্য একজন মুমিনের উদাহরণ হল দেহের মাঝে মাথার মত। মুমিন ব্যক্তি অন্য ঈমানদারদের কষ্টে কাতর হয় যেভাবে মাথায় ব্যথা সৃষ্টি হলে সমগ্র দেহে তা টের পাওয়া যায়।” [10]

১৫) বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়া:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

“وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ مَا تَوَادَّ اثْنَانِ فَفُرِّقَ بَيْنَهُمَا إِلَّا بِذَنْبٍ يُحْدِثُهُ أَحَدُهُمَا”

“যার হাতে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রাণ তার কসম, দুজন ব্যক্তি (আল্লাহর উদ্দেশ্যে বা ইসলামের স্বার্থে) বন্ধুত্ব স্থাপন করার পর তাদের বন্ধুত্ব কেবল তখনই নষ্ট হয় যখন তাদের দুজনের একজন কোন গুনাহে লিপ্ত হয়।” [11]

১৬) বিপদাপদ বা সমস্যায় মুষড়ে পড়া:

কোন বিপদ বা বিপর্যয় নেমে আসলে কিছু মানুষ কাঁপতে শুরু করে, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, ঘাবড়ে যায় এবং দুশ্চিন্তায় মুষড়ে পড়ে। এরা শক্তি, সাহস, মানসিক দৃঢ়তা ও স্থির চিত্তে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারে না।

এ সব হয় দুর্বল ঈমানের কারণে। কেননা কারও যদি আল্লাহর প্রতি যদি আস্থা ও বিশ্বাস মজবুত হয় তবে সে আল্লাহর উপর ভরসা করে যত কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক না কেন দৃঢ়তা ও মানসিক শক্তি অটুট রেখে তা মোকাবেলা করতে পারে।

১৭) তর্ক-বিতর্ক ও ঝগড়াঝাঁটি করা:

দলীল-প্রমাণ উপাস্থাপন ও সৎ উদ্দেশ্য ছাড়া তর্ক-বিতর্ক করা মানুষকে সিরাতে মুস্তাকীম তথা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে। আবু উমারা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

مَا ضَلَّ قَوْمٌ بَعْدَ هُدًى كَانُوا عَلَيْهِ إِلَّا أُوتُوا الْجَدَلَ ثُمَّ تَلَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَذِهِ الْآيَةَ {مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلًا بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ

“কোন জাতি হেদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার পরে গোমরাহ হয় না যতক্ষণ না তারা তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়।” অত:পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই আয়াতটি পাঠ করলেন:

مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلًا – بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ

“তারা আপনার সামনে যে উদাহরণ পেশ করে তা কেবল বিতর্কের জন্যেই করে। বস্তুত: তারা হল এক বিতর্ককারী সম্প্রদায়।” [12]

১৮) দুনিয়ার প্রেমে মগ্ন থাকা:

দুনিয়ার জীবন নিয়ে অতিব্যস্ততা ঈমানী দুর্বলতার চিহ্ন। যখন দেখা যাবে, অর্থ-কড়ি, পদমর্যাদা বা সম্মানহানি ঘটলে মনে প্রচণ্ড কষ্ট অনুভূত হচ্ছে তখন বুঝতে হবে এটি ঈমানের ঘাটতির আলামত।

অনুরূপভাবে যদি দেখা যায়, অন্য কেউ এসব দুনিয়াবি জিনিস অর্জন করার কারণে তার প্রতি মনে হিংসা সৃষ্টি হচ্ছে তখন বুঝতে হবে এটিও ঈমানী দুর্বলতার চিহ্ন।

হিংসা মূলত: ঈমান পরিপন্থী কাজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

” لا يَجْتَمِعُ فِي جَوْفِ عَبْدٍ الإِيمَانُ وَالْحَسَدُ ”

“বান্দার হৃদয়ে ঈমান ও হিংসা একত্রিত হতে পারে না।” [13]

১৯) খাদ্য-পানীয়, পোশাক-পরিচ্ছদ, গাড়ি-বাড়ি ইত্যাদিতে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া:

ইসলামে বিলাসিতাকে অনুৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মুআয বিন জাবাল রা.কে ইয়েমেনে পাঠালেন তখন তাকে বেশ কিছু উপদেশ দেন। সেগুলোর মধ্যে একটি হল:

إياكَ والتنعُّمَ فإن عِبَادَ اللهِ ليسُوا بالمتنعِّمينَ

“সাবধান! বিলাসিতা করবে না। কেননা, আল্লাহ (খাঁটি) বান্দাগণ বিলাসী হয় না।” [14]

তথ্যসূত্র

  1. সহীহুল বুখারী ↩︎
  2. সূরা বাকারা: ৭৪ ↩︎
  3. তিরমিযী, হা/৩৪৭৯, সিলসিলা সহীহা, হা/৫৯৪-আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত ↩︎
  4. সূরা নিসা: ১৪২ ↩︎
  5. মাকারিমুল আখলাক-ইবনে আবিদ দুনিয়া, হা/ ৫৬, সিলসিলা সহীহা, হা/৪২৭ ↩︎
  6. সূরা নিসা: ১৪২ ↩︎
  7. নাসাঈ, সহীহুল জামে ১১/২৬৭৮ ↩︎
  8. সূরা আস সফ: ২ ও ৩ ↩︎
  9. সহীহ আল আদাব আল মুফরাদ-আলবানী, হা/৯০১ ↩︎
  10. সিলসিলা সহীহা/১১৩৭ ↩︎
  11. আল আদাবুল মুফরাদ, মুসনাদ আহমদ, সিলসিলা সহীহা/৬৩৭ ↩︎
  12. তিরমিযী হা/৩১৭৬, ইবনে মাজাহ হা/৪৭, সহীহ তারগীব-হাসান, আলবানী ↩︎
  13. সুনানে আবু দাউদ, সহীহুল জামে, হা/১৪৬৪ ↩︎
  14. বায়হাকী, হিলয়া লি আবী নুআইম ৫/১৫৫, সিলসিলা সহীহা, হা/৩৫৩ ↩︎

Leave a Reply