আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান চারটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে:
এক.
সুদৃঢ়ভাবে এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, সবগুলো আসমানী কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে।
বাস্তবে আল্লাহ তাআলা এই বাণীসমূহ দিয়ে কথা বলেছেন। এ বাণীসমূহের মধ্যে কোনটি ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়া পর্দার আড়াল থেকে সরাসরি আল্লাহর নিকট হতে শ্রবণীয়। এর মধ্যে কোনটি ফেরেশতার মাধ্যমে রাসূলের নিকট পৌঁছেছে। এর মধ্যে কোনটি আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজ হাতে লিপিবদ্ধ করেছেন।
“আল্লাহ কোন মানুষের সাথে কথা বললে বলেন ওহীর মাধ্যমে অথবা পর্দার আড়াল থেকে অথবা কোন দূত পাঠানোর মাধ্যমে; যে দূত আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে তিনি যা চান সে ওহী পৌঁছে দেন। নিশ্চয় তিনি মহীয়ান, প্রজ্ঞাময়।”[1]
আল্লাহ আরো বলেন: “আর আল্লাহ মূসার সাথে সরাসরিকথাবলেছেন।”[2]
আল্লাহ তাআলা তওরাতের ব্যাপারে বলেন:“আর আমি তার জন্য ফলকসমূহে লিখে দিয়েছি প্রত্যেক বিষয়ের উপদেশ এবং প্রত্যেক বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা।”[3]
দুই
এ কিতাবসমূহের মধ্যে আল্লাহ তাআলা যেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করেছেন সেগুলোর প্রতি বিস্তারিতভাবে ঈমান আনা। এ ধরনের কিতাবগুলো হচ্ছে- কুরআন, তওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর, সহিফায়ে ইব্রাহিম ও সহিফায়ে মূসা। এ কিতাবগুলোর কথা আল্লাহ তাআলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন।
আর আল্লাহ যে কিতাবগুলোর কথা এজমালিভাবে উল্লেখ করেছেন আমরা সে কিতাবগুলোর প্রতি এজমালিভাবে ঈমান আনব। ঠিক যেইভাবে আল্লাহ আমাদেরকে ঈমান আনার নির্দেশ দিয়েছেন-
“বলুন, আল্লাহ যে কিতাব নাযিল করেছেন, আমি তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি।”[4]
তিন.
এ কিতাবসমূহে উল্লেখিত যে সংবাদগুলো সহিহ সনদে জানা গেছে সেগুলোর প্রতি ঈমান আনা। যেমন- কুরআনের সংবাদসমূহ। অনুরূপভাবে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহের যে সংবাদগুলোতে পরিবর্তন বা বিকৃতি ঘটেনি সে সংবাদসমূহের প্রতি ঈমান আনা।
চার
এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ তাআলা কুরআনকে সকল কিতাবের উপর ফয়সালাকারী ও সত্যায়নকারীরূপে প্রেরণ করেছেন।
“আর আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবের সত্যায়নকারী (মুসাদ্দিক) ও তদারককারীরূপে (মুহাইমিন)।”[5]
তাফসিরকারগণ বলেন, মুহাইমিন অর্থ হচ্ছে- কুরআনের পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবের উপর ফয়সালাকারী, সাক্ষী ও সত্যায়নকারী। অর্থাৎ সে কিতাবসমূহে যা কিছু সত্য কুরআন তার সত্যায়ন করবে এবং যা কিছুতে বিকৃতি, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন ঘটেছে সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং সে কিতাবসমূহের বিধানাবলীকে রহিত করবে; তথা পূর্ববর্তী বিধানসমূহ উঠিয়ে দিবে অথবা নতুন বিধিবিধান আরোপ করবে।
অতএব, পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের অনুসরণকারী যদি হঠকারী না হয় তাহলে তাকে কুরআনের কাছে নতি স্বীকার করতে হবে।
“ঐসব ব্যক্তিআমি এ(কিতাবে)র পূর্বে যাদেরকে কিতাব দিয়েছিলাম, তারা এ(কিতাবে)র প্রতিও ঈমান রাখে। এবং যখন তাদের নিকট এই কিতাব তিলাওয়াত করা হয় তখন তারা বলে, ‘আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, নিশ্চয় এটা আমাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য। নিশ্চয় আমরা এর পূর্বেও মুসলিম ছিলাম।”[6]।
উম্মতে মুহাম্মাদির কর্তব্য
উম্মতে মুহাম্মাদির প্রতিটি সদস্যের কর্তব্য হচ্ছে- প্রকাশ্যে ও গোপনে এই কুরআনের অনুসরণ করা, কুরআনকে আঁকড়ে ধরা, কুরআনের হক আদায় করা। ঠিক যেভাবে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন-
“এটি এমন একটি গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, খুব মঙ্গলময়। অতএব, এর অনুসরণ কর এবং ভয় কর-যাতে তোমরা করুণাপ্রাপ্ত হও।”[7]
কুরআন আঁকড়ে ধরা ও কুরআনের হক আদায় করার অর্থ হচ্ছে- কুরআন
- যা কিছুকে হালাল ঘোষণা করেছে সেগুলোকে হালাল হিসেবে গ্রহণ করা,
- কুরআনের নির্দেশের প্রতি অনুগত হওয়া,
- ধমকির বিষয়াবলী হতে দূরে থাকা,
- দৃষ্টান্তসমূহ থেকে উপদেশ গ্রহণ করা,
- কাহিনীসমূহ হতে শিক্ষা গ্রহণ করা,
- মুহকাম আয়াতের জ্ঞান অর্জন করা,
- মুতাশাবিহ আয়াতের প্রতি আত্মসমর্পন করা,
- কুরআন নির্ধারিত সীমারেখায় থেমে যাওয়া,
- কুরআন রক্ষার্থে প্রতিরোধ গড়ে তোলা,
- কুরআন মুখস্ত করা,
- তেলাওয়াত করা,
- এর আয়াতাবলী নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করা,
- রাতদিন কুরআন দিয়ে নামায পড়া,
- কুরআনের কল্যাণে কাজ করা,
- ইলমের ভিত্তিতে কুরআনের দিকে দাওয়াত দেয়া।
- আসমানী কিতাবের প্রতি ঈমানার মাধ্যমে বান্দা অনেকগুলো উপকার লাভ করে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
- ১. বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার অত্যধিক গুরুত্বের বিষয়টি অবহিত হওয়া। তাইতো তিনি প্রত্যেক কওমকে দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য আলাদা আলাদা কিতাব পাঠিয়েছেন।
- ২. শরিয়ত বা আইন আরোপের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার হেকমত সম্পর্ক জানা। তাইতো তিনি প্রত্যেক কওমের পরিবেশ-পরিস্থিতির উপযোগী শরিয়ত (আইন) প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন: “আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি আইন ও পথ দিয়েছি।”।[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৪৮]
- ৩. আল্লাহ তাআলার এই মহান নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা।
- ৪. কুরআন তেলাওয়াত, কুরআন গবেষণা, কুরআনের অর্থ বুঝা ও সে অনুযায়ী আমল করার মাধ্যমে কুরআনের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা। আল্লাহই ভাল জানেন।
দেখুন: আলামুস সুন্নাহ আল-মানশুরা (৯০-৯৩) এবং শাইখ উছাইমীনের উসুল ছালাছা এর ব্যাখ্যা (৯১, ৯২)।
সোর্সঃ ইসলাম কিউ এ